1
|
দু বছর পর ফরৌণ একটা স্বপ্ন দেখলেন| দেখলেন তিনি নীল নদীর ধারে দাঁড়িয়ে রয়েছেন| |
2
|
স্বপ্নে নদী থেকে সাতটা গরু উঠে এসে ঘাস খেতে লাগল| গরুগুলো ছিল হৃষ্টপুষ্ট, দেখতেও ভালো| |
3
|
এরপর নদী থেকে আরও সাতটা গরু উঠে এসে পাড়ের হৃষ্টপুষ্ট গরুগুলোর গা ঘেঁসে দাঁড়াল| কিন্তু ঐ গরুগুলো রোগা ছিল, দেখতেও অসুস্থ| |
4
|
সেই সাতটা অসুস্থ গরু সাতটা হৃষ্টপুষ্ট গরুগুলোকে খেয়ে ফেলল| তখনই ফরৌণের ঘুম ভেঙ্গে গেল| |
5
|
ফরৌণ আবার শুতে গেলেন; আবার স্বপ্ন দেখলেন| এইবার দেখলেন একটা গাছে সাতটা শীষ বেড়ে উঠছে| শীষগুলো পুষ্ট এবং শস্যে ভরা| |
6
|
তারপর দেখলেন আরও সাতটা শীষ উঠছে| কিন্তু শীষগুলো অপুষ্ট আর পূবের বাতাসে ঝলসে গেছে| |
7
|
এরপর ঐ রোগা রোগা সাতটা শীষ পুষ্ট সাতটা শীষকে খেয়ে ফেলল| ফরৌণের ঘুম আবার ভেঙ্গে গেল| তিনি বুঝলেন য়ে তিনি স্বপ্ন দেখছিলেন| |
8
|
পরের দিন সকালে রাতে দেখা স্বপ্নগুলোর জন্য ফরৌণের মন অস্থির হয়ে উঠল| তাই তিনি মিশরের সমস্ত যাদুকর ও জ্ঞানী লোকদের ডেকে পাঠালেন| ফরৌণ তার স্বপ্ন তাদের বললেন কিন্তু কেউ তার অর্থ বলতে পারল না| |
9
|
তখন পানপাত্রবাহকের য়োষেফের কথা মনে পড়ল| ভৃত্যটি ফরৌণকে বলল, “আমার সাথে যা ঘটেছিল তা মনে পড়ছে| |
10
|
আপনি আমার ও রুটিওয়ালার উপর রেগে গিয়েছিলেন এবং আমাদের বন্দী করেছিলেন| |
11
|
তারপর এক রাতে সে ও আমি স্বপ্ন দেখলাম| প্রত্যেকটি স্বপ্নের আলাদা অর্থ ছিল| |
12
|
আমাদের সাথে কারাগারে এক ইব্রীয় যুবক ছিল| সে ছিল রক্ষীদের অধিকারী ভৃত্য| আমরা তাকে আমাদের স্বপ্ন বললে সে তার মানে বলে দিল| |
13
|
আর সে যা বলল বাস্তবে তাই-ই ঘটল| সে বলেছিল য়ে আমি মুক্তি পেয়ে আবার পুরানো কাজ ফিরে পাব - ঘটলও তাই| রুটিওয়ালা সম্বন্ধে বলেছিল য়ে সে মারা যাবে - ঘটলও তাই|” |
14
|
তাই ফরৌণ য়োষেফকে ডেকে পাঠালে দুজন রক্ষী দ্রুত তাকে কারাগার থেকে বের করে আনল| য়োষেফ দাড়ি কামালেন, পরিষ্কার জামা পরলেন| তারপর ফরৌণের সঙ্গে দেখা করতে গেলেন| |
15
|
ফরৌণ য়োষেফকে বললেন, “আমি একটা স্বপ্ন দেখেছি কিন্তু কেউ তার ব্যাখ্যা করতে পারছে না| আমি শুনেছি য়ে তুমি স্বপ্ন শুনলে তার ব্যাখ্যা করতে পার|” |
16
|
উত্তরে য়োষেফ বললেন, “আমি পারি না! কিন্তু হয়তো ফরৌণের জন্য ঈশ্বর তার অর্থ বলে দেবেন|” |
17
|
তখন ফরৌণ য়োষেফকে বলতে লাগলেন, “আমার দেখা স্বপ্নে আমি নীল নদীর ধারে দাঁড়িয়েছিলাম| |
18
|
তখন নদী থেকে সাতটা গরু উঠে এসে ঘাস খেতে শুরু করল| গরুগুলো ছিল হৃষ্টপুষ্ট, দেখতেও সুন্দর| |
19
|
তারপর আমি নদী থেকে আরও সাতটি গরু উঠে আসতে দেখলাম| কিন্তু এই গরুগুলো রোগা রোগা, দেখতেও অসুস্থ| ঐরকম বিশ্রী গরু আমি মিশরে কখনও দেখি নি| |
20
|
তারপর রোগা অসুস্থ গরুগুলো প্রথমে আসা হৃষ্টপুষ্ট গরুগুলোকে খেয়ে ফেলল| |
21
|
কিন্তু তাও তাদের চেহারা রোগা আর অসুস্থই রইল| দেখে মনেই হবে না যা তারা সেই মোটা মোটা গরুগুলো খেয়েছে| তারপর আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল| |
22
|
“আমার পরের স্বপ্নে আমি দেখলাম একটা গাছে সাতটা শীষ বেড়ে উঠছে| শীষগুলো পুষ্ট শস্যের দানায ভরা| |
23
|
তারপর সেগুলোর পরে সাতটা আরও শীষ উঠে এলো| কিন্তু এগুলো রোগা আর পূবের বাতাসে ঝলসানো ছিল| |
24
|
এরপর সেই অপুষ্ট শীষগুলো পুষ্ট শীষগুলোকে খেয়ে ফেলল|“আমার যাদুকরদের আমি এই স্বপ্নগুলো বললাম বটে কিন্তু তারা তার অর্থ বলতে পারল না| স্বপ্নগুলোর অর্থ কি?” |
25
|
তখন য়োষেফ ফরৌণকে বললেন, “এই দুই স্বপ্নের বিষয়টা এক| ঈশ্বর শীঘ্রই যা করতে চলেছেন তা আপনার কাছে প্রকাশ করেছেন| |
26
|
উভয় স্বপ্নের প্রকৃত অর্থ এক| সাতটা ভাল গরু এবং সাতটা ভাল শীষ সাতটা ভাল বছরকে বোঝাচ্ছে| |
27
|
আর সাতটা রোগা গরু, সাতটা অপুষ্ট শীষ বোঝায় সাতটা দুর্ভিক্ষের বছর| সাতটা ভাল বছরের পর দুর্ভিক্ষের সাত বছর আসবে| |
28
|
শীঘ্র যা ঘটতে চলেছে ঈশ্বর তাই-ই আপনাকে দেখিয়েছেন| য়ে ভাবে আমি বললাম ঈশ্বর সেইভাবেই এসব ঘটাবেন| |
29
|
সাত বছর মিশরে প্রচুর শস্য উত্পন্ন হবে| |
30
|
বছর বয়সে তিনি মিশর দেশের রাজার সেবা করতে শুরু করলেন| তিনি সমস্ত মিশর দেশ ঘুরলেন| |
31
|
লোকরা ভুলে যাবে শস্যের প্রাচুর্য়্য় বলতে কি বোঝায| |
32
|
“ফরৌণ, আপনি একটি বিষয় নিয়ে দুটি স্বপ্ন দেখেছন| কারণ ঈশ্বর য়ে সত্যিই তা ঘটাতে চলেছেন তা আপনাকে দেখাতে চাইলেন| আর তিনি শীঘ্রই তা ঘটাবেন| |
33
|
তাই ফরৌণ, আপনার উচিত্ একজন সুবুদ্ধি ও জ্ঞানবান লোক খুঁজে তাকে মিশর দেশের জন্য নিযুক্ত করা| |
34
|
তারপর আপনি অন্য লোকদের নিয়োগ করুন য়েন তারা খাদ্য সংগ্রহ করে| সাতটি ভাল বছরের প্রত্যেকটি লোক তাদের উত্ পন্ন শস্যের এক পঞ্চমাংশ সেই লোকদের দিক| |
35
|
এইভাবে ঐ লোকরা ঐ সাতটি ভাল বছরে প্রচুর খাদ্য সংগ্রহ করে প্রয়োজন না পড়া পর্য্ন্ত শহরে শহরে সংগ্রহ করে রাখবে| এইভাবে ফরৌণ, আপনার অধীনে ঐ খাদ্য আসবে| |
36
|
তারপর দুর্ভিক্ষের সাত বছরে মিশর দেশের জন্য খাদ্য থাকবে| আর দুর্ভিক্ষে মিশর ধ্বংস হয়ে যাবে না|” |
37
|
এই পরিকল্পনা ফরৌণের মনপুতঃ হল আর তাঁর আধিকারিকরাও মেনে নিল| |
38
|
তারপর ফরৌণ তাদের বললেন, “ঐ কাজ করার জন্যে মনে হয় না আমরা য়োষেফের থেকে আর ভাল কাউকে পাব! ঈশ্বরের আত্মা তার সঙ্গে রয়েছে আর সেই জন্যই সে জ্ঞানবান!” |
39
|
তাই ফরৌণ য়োষেফকে বললেন, “ঈশ্বর তোমাকে এই সমস্ত যখন জানিয়েছেন তখন তোমার মত জ্ঞানী আর কে হতে পারে? |
40
|
আমি তোমাকে আমার নিয়ন্ত্রণের জন্য নিযুক্ত করলাম, সমস্ত লোক তোমার আদেশ পালন করবে| ক্ষমতার দিক থেকে কেবল আমি তোমার চেযে বড় থাকব|” |
41
|
ফরৌণ য়োষেফকে বিশেষ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে রাজ্যপাল করলেন| ফরৌণ য়োষেফকে বললেন, “আমি তোমাকে সমগ্র মিশরের রাজ্যপাল হিসেবে নিযুক্ত করলাম|” |
42
|
তারপর ফরৌণ তাঁর আংটি খুলে য়োষেফের হাতে পরিযে দিলেন| সেই আংটিতে রাজকীয ছাপ ছিল| ফরৌণ তাকে মিহি কার্পাসের পোশাক দিলেন এবং তার গলায সোনার হার পরিযে দিলেন| |
43
|
ফরৌণ য়োষেফকে দ্বিতীয় রথে চড়তে দিলেন| রক্ষকরা য়োষেফের রথের আগে আগে য়েতে য়েতে লোকদের বলতে থাকল, “য়োষেফের সামনে হাঁটু গাড়ো|”এইভাবে য়োষেফ সমগ্র মিশরের রাজ্যপাল হলেন| |
44
|
ফরৌণ তাকে বললেন, “আমি রাজা ফরৌণ, সুতরাং আমি যা চাই তাই করব কিন্তু মিশরের আর কেউ তোমার আজ্ঞা ছাড়া হাত অথবা পা তুলতে পারবে না|” |
45
|
ফরৌণ য়োষেফের আর এক নাম সাফনত্-পানেহ রাখলেন| ফরৌণ য়োষেফকে আসনত্ নামে এক কন্যার সঙ্গে বিয়েও দিলেন| সে ছিল ওন নামক শহরে যাজক পোটীফরের কন্যা| এইভাবে য়োষেফ সমস্ত মিশর দেশের রাজ্যপাল হলেন| |
47
|
সাত বছর মিশরে খুব ভাল শস্য উত্পন্ন হল| |
48
|
আর ঐ সাত বছর ধরে য়োষেফ মিশরে খাবার সঞ্চয় করলেন| প্রত্যেক শহরে শহরে য়োষেফ সেই শহরের আশেপাশের ক্ষেতে যা জন্মাত তার থেকে সংগ্রহ করতেন| |
49
|
য়োষেফ সমুদ্রের বালির মত এত শস্য সংগ্রহ করলেন য়ে তা মাপা গেল না কারণ তা মাপা সম্ভব ছিল না| |
50
|
য়োষেফের স্ত্রী আসমত্ ছিলেন ওন শহরের যাজকের কন্যা| দুর্ভিক্ষের প্রথম বছর আসার আগেই য়োষেফ এবং আসমতের দুটি পুত্র হল| |
51
|
প্রথম পুত্রের নাম রাখা হল মনঃশি| য়োষেফ এই নাম দিলেন কারণ তিনি বললেন, “ঈশ্বর আমার সমস্ত কষ্ট ও আমার বাড়ীর সমস্ত চিন্তা ভুলে য়েতে দিলেন|” |
52
|
য়োষেফ দ্বিতীয় পুত্রের নাম রাখলেন ইফ্রয়িম| য়োষেফ এই নাম রাখলেন কারণ তিনি বললেন, “আমার মহাকষ্টের মধ্যেও ঈশ্বর আমাকে ফলবান করেছেন|” |
53
|
সাত বছর লোকেরা খাদ্যের জন্য প্রচুর শস্য পেল| তারপর সেই বছরগুলো শেষ হল| |
54
|
এবার দুর্ভিক্ষের সাতটা বছর শুরু হল ঠিক য়েমনটি য়োষেফ বলেছিলেন| সেই অঞ্চলের কোন দেশে কোথাও কোন খাদ্য শস্য জন্মালো না| কিন্তু মিশরের লোকদের জন্য য়থেষ্ট খাদ্য ছিল. কারণ য়োষেফ শস্য জমা করে রেখেছিলেন| |
55
|
দুর্ভিক্ষের সময় শুরু হলে লোকেরা খাদ্যের জন্য ফরৌণের কাছে এসে কান্নাকাটি করল| ফরৌণ মিশরীযদের বললেন, “যাও য়োষেফকে গিয়ে জিজ্ঞেস কর কি করতে হবে|” |
56
|
সব জায়গায় দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে য়োষেফ গুদাম থেকে লোকদের শস্য বিক্রি করতে শুরু করলেন| দুর্ভিক্ষ মিশরেও ভযাবহ রূপ নিল| |
Genesis 41:14 Bengali Language Bible Words basic statistical display
COMING SOON ...