সুতরাং ইস্রায়েলের সমস্ত লোকরা একত্র হল| তাদের উদ্দেশ্য হল মিস্পা শহরে প্রভুর সামনে দাঁড়ানো| তারা দান থেকে বের-শেবা পর্য়ন্ত ইস্রায়েলের সব জায়গা থেকেই এসেছিল| এমনকি ইস্রায়েলীয়রা গিলিয়দ শহর থেকেও এসেছিল|
রাতের বেলা গিবিয়া শহরের প্রধানরা আমি যে বাড়িতে ছিলাম সেখানে এল| তারা বাড়িটাকে ঘিরে ফেলে আমাকে হত্যা করতে চেয়েছিল| তারা আমার দাসীকে ধর্ষণ করেছিল| তাতে সে মারা গেল|
তারপর আমি আমার দাসীর দেহটাকে টুকরো টুকরো করলাম এবং ইস্রায়েল পরিবারগোষ্ঠীর প্রত্যেককে একটা করে টুকরো পাঠিয়ে দিলাম| যে সমস্ত প্রদেশ আমরা পেয়েছিলাম সেই সব জায়গাতেই আমার দাসীর 12 টি দেহ খণ্ড পাঠিয়ে দিয়েছিলাম| পাঠিয়েছিলাম এই জন্যই, যে দেখাতে চেয়েছিলাম বিন্যামীনদের লোকরা ইস্রায়েলে এরকম কদর্য় কাজ করেছে|
আমরা ইস্রায়েলের সমস্ত পরিবারগোষ্ঠী থেকে প্রতি 100 জনের মধ্যে 10 জন করে লোক বেছে নেব| এইভাবে প্রতি 1,000 জনে 100 জন আর 10,000 জনে 1,000 জন লোক বেছে নেব| এই বাছাই করা লোকরা সৈন্যদের যা যা দরকার সব পাবে| তারপরে তারা বিন্যামীন এলাকার গিবিয়া শহরে পৌঁছাবে| সেখানে যারা ইস্রায়েলীয়দের মধ্যে জঘন্য কাজ করেছিল ওরা তাদের শাস্তি দেবে|”
ইস্রায়েল পরিবারগোষ্ঠীর সমস্ত লোকরা বিন্যামীন পরিবারগোষ্ঠীর কাছে দূতের মাধ্যমে খবর পাঠিয়েছিল| খবরটা হচ্ছে: “তোমাদের মধ্যে কিছু লোকরা যে কদর্য় কাজ করেছে সে বিষযে তোমাদের বক্তব্য কি?
তোমরা ঐ গিবিয়ার মন্দ লোকদের আমাদের কাছে পাঠিয়ে দাও| আমরা তাদের ধ্বংস করব| ইস্রায়েলীয়দের মধ্যে যত মন্দ আছে সব আমরা দূর করব|”কিন্তু বিন্যামীন পরিবারগোষ্ঠীর লোকরা দূতদের কথায় কান দিল না| বার্তাবাহকেরা ছিল সম্পর্কে তাদেরই আত্মীয| তারাও ছিল ইস্রায়েলীয়|
এছাড়াও তারা আরো 700 জন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সৈন্য পেয়েছিল| তারা ছিল সব বাঁ-হাতি সৈন্য| এমনকি তারা একটা চুল লক্ষ্য করে অব্যর্থভাবে পাথর ছুঁড়তে পারত এবং লক্ষ্যভ্রষ্ট হত না|
ইস্রায়েলীয়রা বৈথেল শহরে গিয়ে ঈশ্বরকে জিজ্ঞাসা করল, “কোন পরিবারগোষ্ঠী সবচেয়ে আগে বিন্যামীনদের আক্রমণ করবে?প্রভু বললেন, “যিহূদার পরিবারগোষ্ঠী প্রথমে যাবে|”
তারপর ইস্রায়েলের সৈন্যবাহিনী বিন্যামীন সৈন্যবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য বেরিয়ে পড়লো| গিবিয়াতে ইস্রায়েল সেনাবাহিনী বিন্যামীন সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত ছিল|
ইস্রায়েলবাসীরা প্রভুর কাছে গেল| সন্ধ্যা পর্য়ন্ত তারা ক্রন্দন করল| প্রভুকে তারা জিজ্ঞাসা করল, “আমরা কি আবার বিন্যামীনদের সঙ্গে যুদ্ধ করব? ওরা তো আমাদের আত্মীযস্বজন|”প্রভু উত্তর দিলেন, “যাও, তাদের সঙ্গে যুদ্ধ কর|” ইস্রায়েলের লোকরা এ ওকে উত্সাহ দিতে লাগল| তারপর প্রথম দিনের মতো এবারও তারা যুদ্ধ করতে বেরিয়ে পড়ল|
বিন্যামীন বাহিনী গিবিয়া থেকে বেরিয়ে এসে দ্বিতীয় দিনে ইস্রায়েল বাহিনীকে আক্রমণ করল| এবারে বিন্যামীন সৈন্যরা আরও 18,000 ইস্রায়েল সৈন্যকে হত্যা করল| এই সব ইস্রায়েলীয় সৈন্য ছিল প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত|
তখন সমস্ত ইস্রায়েলবাসীরা বৈথেল শহরে গেল| সেখানে তারা সবাই বসে পড়ে প্রভুর সামনে কাঁদতে লাগল| সারাদিন তারা কিছু খেল না| এইভাবে সন্ধ্যা পর্য়ন্ত কেটে গেল| তারা প্রভুকে হোমবলি ও মঙ্গল নৈবেদ্য উত্সর্গ করল|
পীনহস নামে একজন যাজক সেখানে ঈশ্বরের সেবা করত| পীনহস ইলিয়াসরের পুত্র| ইলিয়াসর হারোণের পুত্র| ইস্রায়েলবাসীরা জিজ্ঞাসা করল, “বিন্যামীনের লোকরা আমাদের আত্মীয| আমরা কি আবার তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করব? নাকি যুদ্ধ থামিয়ে দেব?”প্রভু বললেন, “যাও| আগামীকাল তাদের পরাজিত করতে আমি তোমাদের সাহায্য করব|”
বিন্যামীন সৈন্যবাহিনী গিবিয়া থেকে বেরিয়ে এল ইস্রায়েলীয়দের সঙ্গে যুদ্ধ করতে| ইস্রায়েলবাহিনী তাদের বাধা না দিয়ে সুয়োগ দিতে থাকল যেন তারা ওদের পিছু পিছু তাড়া করে| এই ভাবে তারা কৌশল করে বিন্যামীনদের শহর থেকে অনেক খানি দূরে বের করে আনল|বিন্যামীন সৈন্যরা আগের মত এবারও কিছু ইস্রায়েল সৈন্য হত্যা করতে শুরু করল| তারা প্রায় 30 জন ইস্রায়েলীয়কে হত্যা করল| কয়েকজনকে হত্যা করল মাঠে আর কয়েকজনকে হত্যা করল রাস্তায়| একটা রাস্তা গেছে বৈথেলের দিকে| আর একটা গিবিয়ার দিকে|
বিন্যামীন সৈন্যরা বলে উঠল, “আগের মত এবারও আমরা জিতছি!”ইস্রায়েলের লোকরা পালাচ্ছিল, কিন্তু এটা তাদের একটা চালাকি| তারা আসলে ওদের শহর থেকে বের করে রাস্তায় আনতে চাইছিল|
সেইমত সকলেই দৌড়াচ্ছিল| তারা বাল্তামর নামে একটা জায়গায় থামল| ইস্রায়েলের কয়েকজন লোক গিবিয়ার পশ্চিম দিকে লুকিয়ে ছিল| এবার তারা বেরিয়ে এসে গিবিয়া আক্রমণ করল|
প্রভু ইস্রায়েল সৈন্যবাহিনীকে ব্যবহার করে বিন্যামীন সৈন্যদের পরাজিত করলেন| সেদিন ইস্রায়েলের সৈন্যরা 25,100 জন বিন্যামীন সৈন্য হত্যা করেছিল| এই সৈন্যরা সকলেই যুদ্ধবিদ্য়ায শিক্ষিত ছিল|
এইবার বিন্যামীনরা বুঝতে পারল যে তারা হেরে গেছে|ইস্রায়েলীয় সৈন্যরা এবার পিছু হটলো| পিছু হটার কারণ হচ্ছে তারা এবার হঠাত্ আক্রমণ করার কৌশল নিয়েছে| গিবিয়ার কাছাকাছি একটা জায়গায় তারা লুকিয়ে রইল|
বিন্যামীন সৈন্যরা কমবেশী 30 জন ইস্রায়েল সেনা হত্যা করেছিল| এতেই তারা বলতে লাগল, “আমরা আগের বারের মতো এবারও জিতছি|” কিন্তু তখনই শহর থেকে ধোঁযার মেঘ উঠতে লাগলো| বিন্যামীনের লোকরা সেদিকে ঘাড় ফিরিযে দেখলো সমস্ত শহরে আগুন লেগেছে| এবার ইস্রায়েলীয়রা আর পেছন ফিরল না, তারা ঘুরে দাঁড়িয়ে যুদ্ধ করতে লাগল| বিন্যামীনের লোকরা ভয় পেয়ে গেল| এবার তারা বুঝতে পারলো, কি তাদের অবস্থা|
বিন্যামীনের সৈন্যবাহিনী এবার পালাতে লাগলো| মরুভূমির দিকে তারা ছুটলো, কিন্তু তারা যুদ্ধ এড়াতে পারল না| ইস্রায়েলীয়রা শহর থেকে বেরিয়ে এসে তাদের হত্যা করল|
ইস্রায়েলীয়রা বিন্যামীনের লোকদের ঘেরাও করে তাদের তাড়িয়ে নিয়ে গেল| তারা তাদের বিশ্রাম নিতে দিল না| গিবিয়ার পূর্ব দিকে ইস্রায়েলীয়রা তাদের হারিযে দিল|
অবশিষ্ট সৈন্যরা মরুভূমির দিকে ছুটতে লাগলো এবং তারা পৌঁছোল রিম্মোণ শিলা নামক জায়গায়| কিন্তু তাদের মধ্যে 5,000 জন বিন্যামীন সৈন্য ইস্রায়েলীয়দের হাতে রাস্তাতেই মারা গেল| তারা ওদের গিদোম পর্য়ন্ত তাড়া করেছিল| সেখানে ইস্রায়েল সৈন্যবাহিনী আরও 2,000 বিন্যামীনের লোকদের হত্যা করল|
ইস্রায়েলীয়রা বিন্যামীনদের দেশে ফিরে এল| প্রত্যেক শহরে গিয়ে তারা লোকদের হত্যা করল| জন্তু জানোযারদেরও তারা রেহাই দিল না| সামনে যা খুঁজে পেল সব তারা ভেঙ্গে চুরে দিল| যত শহর পেল তার সমস্তই তারা বালিয়ে দিল|