বাবিল-রাজ বেল্শৎসরের প্রথম বৎসরে দানিয়েল শয্যার উপরে স্বপ্ন ও মনের দর্শন দেখিলেন; তখন তিনি সেই স্বপ্ন লিখিয়া কথার সার প্রকাশ করিলেন। দানিয়েল এই বিবরণ কহিলেন,—
প্রথমটা সিংহের সদৃশ; এবং ঈগল পক্ষীর ন্যায় তাহার পক্ষ ছিল; আমি দেখিতে দেখিতে তাহার সেই দুই পক্ষ উৎপাটিত হইল, পরে তাহাকে ভূমি হইতে উঠাইয়া মানুষের মত দুই চরণে দাঁড় করান হইল, এবং মানুষের হৃদয় তাহাকে দত্ত হইল।
পরে দেখ, আর এক জন্তু; সেই দ্বিতীয়টা ভল্লূকের সদৃশ, সে এক পার্শ্বে চরণে ভর দিয়া দাঁড়াইল, এবং তাহার মুখে দন্তশ্রেণীর মধ্যে তিন খান পঞ্জরের অস্থি ছিল; তাহাকে বলা হইল, উঠ, যথেষ্ট মাংস ভোজন কর।
তৎপরে আমি দৃষ্টিপাত করিলাম, আর দেখ, আর এক জন্তু, সে চিতাব্যাঘ্রের সদৃশ, তাহার পৃষ্ঠে পক্ষীর ন্যায় চারি পক্ষ ছিল; আবার সেই জন্তুর চারি মস্তক ছিল, এবং তাহাকে কর্ত্তৃত্ব দত্ত হইল।
তৎপরে আমি রাত্রিকালীন দর্শনে দৃষ্টিপাত করিলাম, আর দেখ, চতুর্থ এক জন্তু, সে ভয়ঙ্কর, ক্ষমতাপন্ন ও অতিশয় শক্তিমান্; এবং তাহার বৃহৎ লৌহময় দন্ত ছিল, সে ভক্ষণ করিল ও চূর্ণ করিল, এবং উচ্ছিষ্টকে পদতলে দলিত করিল; আর পূর্ব্বকার সকল জন্তু হইতে সে ভিন্ন, ও তাহার দশটী শৃঙ্গ ছিল।
আমি সেই শৃঙ্গের বিষয় ভাবিতেছিলাম, আর দেখ, তাহাদের মধ্যে আর এক শৃঙ্গ উঠিল, ইহা ক্ষুদ্র, ইহার সাক্ষাতে পূর্ব্ব শৃঙ্গগুলির তিন শৃঙ্গ সমূলে উৎপাটিত হইল; আর দেখ, ঐ শৃঙ্গে মানুষের চক্ষুর মত চক্ষু ও দর্পবাক্যবাদী মুখ ছিল।
আমি ঐ শৃঙ্গের কথিত দর্পবাক্যের রব প্রযুক্ত দৃষ্টিপাত করিতে থাকিলাম, আমি দৃষ্টিপাত করিতে থাকিলাম, যে পর্য্যন্ত সে জন্তু হত না হইল, তাহার শরীর বিনষ্ট না হইল, এবং তাহাকে অগ্নিশিখাতে ফেলিয়া দেওয়া না হইল।
আমি রাত্রিকালীন দর্শনে দৃষ্টিপাত করিলাম আর দেখ, আকাশের মেঘ সহকারে মনুষ্য-পুত্রের ন্যায় এক পুরুষ আসিলেন, তিনি সেই অনেক দিনের বৃদ্ধের নিকটে উপস্থিত হইলেন, তাঁহার সম্মুখে আনীত হইলেন।
আর তাঁহাকে কর্ত্তৃত্ব, মহিমা ও রাজত্ব দত্ত হইল; লোকবৃন্দ, জাতি ও ভাষাবাদীকে তাঁহার সেবা করিতে হইবে; তাঁহার কর্ত্তৃত্ব অনন্তকালীন কর্ত্তৃত্ব, তাহা লোপ পাইবে না, এবং তাঁহার রাজ্য বিনষ্ট হইবে না।
যাঁহারা নিকটে দাঁড়াইয়াছিলেন, আমি তাঁহাদের এক জনের কাছে গমন করিলাম এবং এই সকলের তথ্য জিজ্ঞাসা করিলাম। তিনি আমাকে এই কথা বলিয়া বিষয়টীর তাৎপর্য্য বুঝাইয়া দিলেন,
তখন আমি সেই চতুর্থ জন্তুর তথ্য জানিতে চাহিলাম, যে অন্য সকল হইতে ভিন্ন ও অতি ভয়ানক, যাহার দন্ত লৌহময় ও নখ পিত্তলময়, যে ভক্ষণ করিয়াছিল, চূর্ণ করিয়াছিল, ও উচ্ছিষ্টকে পদতলে দলিত করিয়াছিল।
আর তাহার মস্তকে স্থিত দশ শৃঙ্গের তথ্য, ও যে অন্য শৃঙ্গ উঠিয়াছিল, যাহার সাক্ষাতে তিন শৃঙ্গ পড়িয়া গেল; সেই শৃঙ্গ, যাহার চক্ষু ও দর্পবাক্যবাদী মুখ ছিল, সহচরগণ অপেক্ষা যাহার বিপুল দৃশ্য ছিল, সেই শৃঙ্গের তথ্য জানিতে চাহিলাম।
তিনি এইরূপ কথা কহিলেন, ঐ চতুর্থ জন্তু পৃথিবীর চতুর্থ রাজ্য; সে রাজ্য সকল রাজ্য হইতে ভিন্ন হইবে, এবং সমস্ত পৃথিবীকে গ্রাস করিবে, মর্দ্দন করিবে ও চূর্ণ করিবে।
আর তাহার দশ শৃঙ্গের তাৎপর্য্য; ঐ রাজ্য হইতে দশ রাজা উৎপন্ন হইবে। তাহাদের পরে আর এক জন উঠিবে, সে পূর্ব্ববর্ত্তী রাজাদের হইতে ভিন্ন হইবে, এবং তিন রাজাকে নিপাত করিবে।
সে পরাৎপরের বিপরীতে কথা কহিবে, পরাৎপরের পবিত্রগণকে শীর্ণ করিবে, এবং নিরূপিত সময়ের ও ব্যবস্থার পরিবর্ত্তন করিতে মনস্থ করিবে, এবং এক কাল, [দুই] কাল ও অর্দ্ধ কাল পর্য্যন্ত তাহারা তাহার হস্তে সমর্পিত হইবে।
আর রাজত্ব, কর্ত্তৃত্ব ও সমস্ত আকাশমণ্ডলের অধঃস্থিত রাজ্যের মহিমা পরাৎপরের পবিত্র প্রজাদিগকে দত্ত হইবে; তাঁহার রাজ্য অনন্তকালস্থায়ী রাজ্য, এবং সমস্ত কর্ত্তৃত্ব তাঁহার সেবা করিবে ও তাঁহার আজ্ঞাবহ হইবে।