চলুন যর্দন নদীর তীর থেকে কিছু কাঠ কেটে আনা যাক| আমরা প্রত্যেকে একটা করে গুঁড়ি নিয়ে এসে ওখানেই একটা থাকার জায়গা বানানো যাক|”ইলীশায় বললেন, “বেশ তো, যাও না|”
গাছ কাটার সময় এক জনের কুড়ুলের লোহার ডগাটা হাতল থেকে পিছলে গিয়ে একেবারে জলে গিয়ে পড়লো| লোকটা চেঁচিয়ে উঠলো, “য়াঃ! এখন কি হবে? প্রভু আমি য়ে অন্য লোকের কুড়ুল ধার করে এনেছিলাম!”
অরামের রাজা ইস্রায়েলের সঙ্গে যুদ্ধ করছিলেন| তিনি তাঁর সেনাবাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে একটি পরিষদীয বৈঠক করলেন| তিনি বললেন, “আমি একটি নির্দিষ্ট জায়গায় শিবির স্থাপন করব|”
কিন্তু ঈশ্বরের লোকটি ইস্রায়েলের রাজাকে একটি খবর দিয়ে সতর্ক করে দিলেন, “ওখান দিয়ে যাতাযাত করো না! খুব সাবধান! কারণ ওখানে অরামীয় সেনাবাহিনীর লোকরা লুকিয়ে আছে!”
খবর পেয়ে ইস্রায়েলের রাজা সঙ্গে সঙ্গে য়ে জায়গা সম্পর্কে ইলীশায় তাঁকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন, তাঁর লোকদের জানিয়ে দিলেন এবং তিনি তাঁর বাহিনীর অনেকের জীবন রক্ষা করতে পারলেন|
তখন অরামীয় সেনাপ্রধানদের এক জন বললেন, “আমার মনিব এবং রাজা, আমাদের মধ্যে কেউই গুপ্তচর নয়! ইস্রায়েলের ভাব্বাদী ইলীশায়, ইস্রায়েলের রাজাকে অনেক গোপন খবরই দৈব্বলে জানিয়ে দিতে পারেন| এমন কি আপনি শোবার ঘরে য়ে সব কথাবার্তা বলেন তাও উনি জানতে পারেন!”
সেই দিন, ঈশ্বরের লোকটির ভৃত্য খুব ভোরে উঠে পড়ল, বাইরে গিয়ে দেখে ঘোড়া রথসহ বিরাট এক সেনাবাহিনী শহরের চারপাশ ঘিরে আছে! সে ছুটে গিয়ে ঈশ্বরের লোককে জিজ্ঞেস করল, “প্রভু আমরা এখন কি করব?”
ইলীশায় তারপর প্রার্থনা করে বললেন, “হে প্রভু, আমার ভৃত্যের চক্ষু উন্মিলীত কর যাতে ও দেখতে পায|”য়েহেতু প্রভু সেই তরুণ ভৃত্যকে অলৌকিক দৃষ্টি দিলেন, ও দেখতে পেল, গোটা শহরটা শত সহস্র ঘোড়া আর আগুনের রথে ভরে রযেছে! ইলীশায়কে ঘিরে আছে এই বাহিনী|
এই সুবিশাল বাহিনী ইলীশায়ের আদেশের অপেক্ষায নেমে এলে, তিনি প্রভুর কাছে প্রার্থনা করে বললেন, “তুমি ঐসব সেনার দৃষ্টিশক্তি কেড়ে নাও|”ইলীশায়ের প্রার্থনা মতো প্রভু তখন অরামীয় সেনাবাহিনীর দৃষ্টিশক্তি হরণ করলেন|
ইলীশায় অরামীয় সেনাবাহিনীকে ডেকে বললেন, “এটা সঠিক পথ বা শক্ত শহর নয়| আমার সঙ্গে সঙ্গে এসো| তোমরা যাকে খুঁজছো, আমি তোমাদের তার কাছে পৌঁছে দেব চল|” একথা বলে ইলীশায় তাদের শমরিয়ায নিয়ে গেলেন|
শমরিয়ায পৌঁছনোর পর ইলীশায় বললেন, “প্রভু এবার ওদের দৃষ্টিশক্তি ফিরিযে দাও যাতে ওরা আবার দেখতে পায|” প্রভু তখন তাদের দৃষ্টিশক্তি ফিরিযে দিলে অরামীয় সেনাবাহিনী দেখলো তারা সকলে শমরিয়া শহরের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে|
ইলীশায় বললেন, “না, ওদের তুমি হত্যা কর না| যুদ্ধে তরবারি আর তীর-ধনুকের বলে যাদের তুমি বন্দী করবে, তাদের হত্যা করবে না| অরামীয় সেনাদের এখন রুটি আর জল পান করতে দাও| খাওয়া-দাওয়া হলে ওদের রাজার কাছে ওদের বাড়ীতে ফেরত্ পাঠিয়ে দিও|”
তখন ইস্রায়েলের রাজা অরামীয় সেনাবাহিনীর জন্য অনেক খাবার বানালেন| অরামের সেনারা সে সব খাবার পর মহারাজ তাদের নিজেদের বাড়িতে ফেরত্ পাঠিয়ে দিলেন| অরামীয় সেনাবাহিনী তাদের মনিবের কাছে দেশে ফিরে গেল| এরপর আর কখনও অরামীয়রা লুঠপাট চালানোর জন্য ইস্রায়েলে কোন সেনাবাহিনী পাঠায নি|
অরামীয় সেনারা লোকদের বাইরে থেকে শহরে খাবার আনতে দিচ্ছিল না| ফলে শমরিয়ায ভযাবহ দুর্ভিক্ষ শুরু হল| খাবারের দাম এতো বেশী ছিল য়ে গাধার মাথা কিনতে দিতে হচ্ছিল 80 টুকরো রৌপ্য মুদ্রা, এমনকি ঘুঘু পাখীর বিষ্ঠাও বিক্রি হচ্ছিল পাঁচ টুকরো রৌপ্য মুদ্রায|
তখন ইস্রায়েলের রাজা বললেন, “প্রভু যদি নিজে তোমাকে রক্ষা না করেন, আমি কি করতে পারি বল? তোমাকে দেবার মতো আমার কিছুই নেই| এমনকি শস্য মাড়াইযের জমিতেও কোন শস্য নেই বা দ্রাক্ষা পেষার যন্ত্র থেকেও দ্রাক্ষারস নেই|”
একথা শুনে রাজা অত্যন্ত মনোকষ্টে, শোক প্রকাশের জন্য নিজের পোশাক ছিঁড়ে ফেললেন| দেওয়ালের ওপর দিয়ে যাবার সময়, লোকরা দেখতে পেল মহারাজ তাঁর পোশাকের তলায় শোক প্রকাশের চটের জামা পরে আছেন|
রাজা ইলীশায়ের কাছে এক জন বার্তাবাহক পাঠালেন| ইলীশায় আর প্রবীণরা তখন ইলীশায়ের বাড়ীতে এক সঙ্গে বসেছিলেন| ইলীশায় প্রবীণদের বললেন, “দেখো খুনীর বেটা রাজা, আমার মুণ্ডু কাটার জন্য লোক পাঠিয়েছে! দূত এলে দরজাটা বন্ধ করে দিও, ওকে কিছুতেই ভেতরে ঢুকতে দেবে না| ওর পেছন পেছন ওর মনিবের পাযের আওয়াজ পাচ্ছি আমি!”