এক জন ব্বিাহিত ভাব্বাদীর মৃত্যু হলে তার স্ত্রী এসে ইলীশায়ের কাছে কেঁদে পড়লো, “আমার স্বামী অনুগত ভৃত্যের মতো আপনার সেবা করেছেন| কিন্তু এখন তিনি মৃত! আপনি জানেন আমার স্বামী প্রভুকে সম্মান করেন কিন্তু তিনি এক জন পুরুষের কাছে টাকা ধার করেছিলেন| এখন সেই মহাজন এীতদাস বানানোর জন্য আমার দুই পুত্রকে নিতে আসছে|”
ইলীশায় জিজ্ঞেস করলেন, “কিন্তু আমি কি করে তোমায় সাহায্য করবো? তোমার বাড়িতে কি আছে বলো?”সেই স্ত্রীলোকটি বললো, “আমার বাড়িতে এক জালা তেল ছাড়া আর কিছুই নেই|”
তারপর বাড়ি গিয়ে সমস্ত দরজা বন্ধ করে দাও, ঘরে য়েন তুমি আর তোমার পুত্ররা ছাড়া কেউ না থাকে| এরপর ঐ জালা থেকে তেল ঢেলে প্রত্যেকটা বাটি ভর্তি করে আলাদা আলাদা জায়গায় সরিয়ে রাখো|”
স্ত্রীলোকটি সেগুলোতে তেল ঢালছিল| এমনি করে করে বহু পাত্র ভরা হল| অবশেষে সে তার পুত্রদের বললো, “আমাকে আর একটি বাটি এনে দাও|”তার এক পুত্র তাকে বললো, “আর তো বাটি নেই|” তত্ক্ষণাত্ জালার তেল ফুরিযে গেল|
স্ত্রীলোকটি গিয়ে ঈশ্বরের লোক, ইলীশায়কে একথা জানালো| ইলীশায় তাকে বললেন, “যাও, তেল বিক্রি করে দেনা মিটিযে ফেলো| যা বাকী টাকা থাকবে তাতে তোমার আর তোমার পুত্রদের জন্য য়থেষ্ট হবে|”
ইলীশায় যখন একদিন শূনেমে যান, সেখানকার এক ধনবতী মহিলা তাঁকে নিজের বাড়িতে খাবার জন্য নেমন্তন্ন করল| এরপর থেকে ইলীশায় ওখান দিয়ে গেলেই ঐ মহিলার বাড়িতে গিয়ে খাওয়া-দাওয়া করতেন|
চলো না, ওঁর জন্য ছাদে একটা ছোটো ঘর তুলে দিই| সেখানে একটা বিছানা, টেবিল, চেযার আর বাতিদান রেখে দেব| তাহলে এরপর যখন তিনি আমাদের বাড়ি আসবেন ঐ ঘরখানা নিজের জন্য ব্যবহার করতে পারবেন|”
তাঁর ভৃত্যকে বললেন, “ওকে বলো, ‘দেখো তুমি আমাদের দুজনের য়ত্ন নেবার জন্য তোমার যথাসাধ্য করেছো| এখন আমরা তোমার জন্য কি করতে পারি? আমরা কি তোমার হয়ে রাজা বা সেনাপতির কাছে কিছু বলবো?”‘তখন মহিলা উত্তর দিল, “আমি এখানে আমার আত্মীয-স্বজনের মধ্যে দিব্য়ি আছি|”
ইলীশায় তখন গেহসিকে জিজ্ঞেস করলেন, “আমরা তাহলে ওর জন্য কি করতে পারি?”গেহসি উত্তর দিলো, “দাঁড়ান, আমি যতদূর জানি এই মহিলার কোনো পুত্র নেই আর ওঁর স্বামীরও য়থেষ্ট বয়স হয়েছে|”
তুমি তাড়াতাড়ি দৌড়ে গিয়ে খোঁজ নাও তো, ‘কি হল - সব ঠিক আছে কি না, ওর স্বামী কেমন আছে? বাচচাটার শরীর ভালো আছে কি না?”‘গেহসি মহিলাকে এসব জিজ্ঞেস করতে সে বলল, “সবই ঠিকঠাক আছে|”
তারপর পাহাড়ের ওপরে ইলীশায়ের সামনে নত হয়ে তাঁর পা জড়িয়ে ধরলেন| গেহসি মহিলাকে ছাড়িযে নিতে গেলে ইলীশায় বললেন, “ওকে কিছু ক্ষণ আমার সঙ্গে একা থাকতে দাও! ও খুবই ভেঙ্গে পড়েছে| আর প্রভুও আমাকে এখবর দেন নি, আমার কাছে গোপন করেছিলেন|”
একথা শুনে, ইলীশায় গেহসিকে বললেন, “কোমর বেঁধে তৈরি হও, আমার লাঠিটা নাও এবং এক্ষুনি যাও| পথে কারো সঙ্গে কথা বলার জন্য থেমো না| যদি কারো সঙ্গে দেখা হয়, “কি কেমন” পর্য়ন্ত বলার দরকার নেই| তোমাকেও কেউ বললে, কোন উত্তর দেবে না| মহিলার বাড়িতে পৌঁছে আমার লাঠিটা বাচচাটার মুখে ছুঁইযে দিও|”
এদিকে গেহসি মহিলা ও ইলীশায়ের আগে আগে বাড়িতে এসে সেই লাঠিটা নিয়ে বাচচাটার মুখে ছোঁযালো, কিন্তু তাতে কোন জীবনের লক্ষণ দেখা গেল না| গেহসি তখন ফিরে এসে ইলীশায়কে বলল, “ছেলেটা তো উঠল না প্রভু!”
তারপর বিছানায গিয়ে শুয়ে পড়লেন সেই মৃত ছেলেটির দেহের ওপর| তিনি ছেলেটির মুখের ওপর নিজের মুখ রাখলেন, তার চোখের ওপর নিজের চোখ এবং তার হাতের ওপর নিজের হাত রাখলেন| এভাবে ঐ মৃত শরীরটা গরম হয়ে না ওঠা পর্য়ন্ত শুয়ে থাকলেন ইলীশায়|
তারপর উঠে পড়ে ঘরটার চারপাশে কিছুক্ষণ হেঁটে আবার গিয়ে ঐ দেহের ওপর শুলেন তিনি| ওভাবেই তিনি শুয়ে থাকলেন, যত ক্ষণ না সাতবার হাঁচার পর চোখ মেলে উঠে বসল ছেলেটা|
গিল্গলে তখন দুর্ভিক্ষ চলছিল| ইলীশায় আবার সেখানে গেলেন| ভাব্বাদীদের দলটি তাঁর সামনে বসে ছিল| ইলীশায় তাঁর ভৃত্যকে বললেন, “বড় পাত্রটা আগুনে বসিযে এদের জন্য একটু রান্না কর|”
এক জন মাঠে শাকসব্জি তুলতে গেল| মাঠে গিয়ে একটা ফলভরা জঙ্গলী লতা দেখতে পেয়ে লোকটা ফল ছিড়ে কোঁচড়ে বেঁধে নিয়ে এলো| তারপর সেই ফল কেটে পাত্রে দিয়ে দিল, যদিও ভাব্বাদীদের দল আদৌ জানতো না ওটা কি ধরণের ফল|
ইলীশায় তখন কিছুটা মযদা আনতে বললেন| মযদা আনা হলে, তিনি সেই মযদা পাত্রে ছুঁড়ে দিয়ে বললেন, “এবার ঐ ঝোল সবাইকে খেতে দাও|”আর আশ্চর্য়্য় ব্যাপার, ঝোলটা বেশ খাবার য়োগ্য হয়ে গেল|
বাল্-শালিশা থেকে এক জন ইলীশায়ের জন্য নবান্নের ফসল হিসেবে 20 খানা য়বের রুটি আর ঝোলা ভরে শস্য উপহার নিয়ে এসেছিল| ইলীশায় বললেন, “এই সব খাবার এখানে যারা আছে তাদের খেতে দাও|”
ইলীশায়ের ভৃত্য বললো, “এখানে প্রায় 100 জন লোক আছে| এত জন লোককে আমি এইটুকু খাবার কি করে দেব?”কিন্তু ইলীশায় বললেন, “আমি বলছি তুমি খেতে দাও| প্রভু বলছেন, ‘সবাই খাওয়ার পরেও খাবার পড়ে থাকবে|”‘