তারপর তিনি প্রভুর মন্দিরে গেলেন| যিহূদা ও জেরুশালেমের সমস্ত লোক ও যাজকগণ, ভাব্বাদীগণ, সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে মহান ব্যক্তিও তাঁর সঙ্গে মন্দিরে গেল| তারপর তিনি প্রভুর মন্দিরে খুঁজে পাওয়া বিধিপুস্তকটি সবাইকে উচ্চস্বরে পড়ে শোনালেন|
স্তম্ভের পাশে দাঁড়িয়ে রাজা য়োশিয প্রভুর কাছে তাঁর সমস্ত বিধি ও নীতিগুলি মেনে চলবেন বলে প্রতিজ্ঞা করলেন| তিনি কাযমনোবাক্যে এই সমস্ত ও বিধিপুস্তকে যা কিছু বর্ণিত আছে তা পালনে প্রতিশ্রুত হলেন| সমস্ত লোক, রাজার প্রার্থনায য়ে তাদেরও মত আছে তা দেখাতে উঠে দাঁড়ালো|
তারপর রাজা য়োশিয, প্রধান যাজক হিল্কিয, অন্যান্য যাজকদের, মন্দিরের দাররক্ষী প্রভুর মন্দির থেকে বাল মূর্ত্তি, আশেরা ও নক্ষত্রদের পূজা ও আনুগত্য প্রদর্শনের জন্য ব্যবহৃত সমস্ত থালা ও অন্যান্য জিনিসপত্র বের করে আনতে নির্দেশ দিলেন| এরপর তিনি এই সব কিছু জেরুশালেমের বাইরে কিদ্রোণের উপত্যকায নিয়ে গিয়ে পুড়িয়ে সেই ছাই বৈথেলে নিয়ে এলেন|
যিহূদার রাজারা হারোণের পরিবারের বাইরের কিছু কিছু সাধারণ লোককে যাজক হিসেবে নিযুক্ত করেছিলেন| এই সব ভ্রান্ত যাজকরা জেরুশালেম ও যিহূদার সর্বত্র মূর্ত্তিদের জন্য বানানো উচ্চস্থানে বাল মূর্ত্তিকে, সূর্য়কে, চাঁদকে, এবং নক্ষত্ররাজির উদ্দেশ্যে ধুপধূনো দিতো| য়োশিয এই সব আচার বন্ধ করে দিয়েছিলেন|
তারপর প্রভুর মন্দির চত্বর থেকে আশেরার মূর্ত্তির জন্য পোঁতা সমস্ত খুঁটি উপড়ে তুলে শহরের বাইরে কিদ্রোণ উপত্যকায নিয়ে গিয়ে পুড়িয়ে ছাই করে, সেই ছাই সাধারণ মানুষদের কবরে ছড়িয়ে দিলেন|
এরপর য়োশিয প্রভুর মন্দির চত্বরের ভেতরে বসবাসকারী পুরুষদেহ ব্যবসাযীদের ঘরগুলো ভেঙে ফেললেন| গণিকারাও এই সব ঘরগুলো ব্যবহার করত এবং আশেরার মূর্ত্তির প্রতি তাদের আনুগত্য জানাতে ছোট ছোট ছাউনি টাঙাতো|
সে সময় যাজকরা যিহূদার বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে বসবাস করত এবং জেরুশালেমে প্রভুর মন্দিরের বেদীতে বলিদান না করে মূর্ত্তিসমূহের জন্য সর্বত্র বানানো উঁচু বেদীগুলোয বলিদান করতো ও ধুপধূনো দিত| গেবা থেকে বের্শেবা পর্য়ন্ত সব জায়গাতেই এই বেদীগুলো ছিল| যাজকরা জেরুশালেমের মন্দিরে তাদের জন্য নির্দিষ্ট জায়গার পরিবর্তে সাধারণ লোকদের সঙ্গে যেখানে খুশী বসে খামিরবিহীন রুটি খেত| য়োশিয সমস্ত যাজকদের জেরুশালেমে আসতে বাধ্য করে, সমস্ত উঁচু বেদী, নগর দ্বারের বাঁ পাশের যাবতীয় বেদী সবই ভেঙে দিয়েছিলেন|
হিন্নোম সোন উপত্যকার তোফতে মোলকের মূর্ত্তির উদ্দেশ্যে লোকরা বেদীতে নিজেদের ছেলেমেয়েকে আগুনে আহুতি দিত| য়োশিয এই পাপাচরণ বন্ধ করার জন্য এই বেদী এমন ভাবে ভেঙে দিয়েছিলেন যাতে তা আর ব্যবহার করা না যায়|
যিহূদার আগের রাজারা প্রভুর মন্দিরের প্রবেশপথে নথন মোলক নামে এক গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারীর ঘরের পাশে সূর্য় দেবতাকে সম্মান জানানোর জন্য একটা ঘোড়ায় টানা রথ তৈরী করে দিয়েছিলেন| য়োশিয সেই রথের ঘোড়াগুলো সরিয়ে রথটাকে পুড়িয়ে দিয়েছিলেন|
রাজা শলোমনও অতীতে জেরুশালেমের কাছে বিনাশ পাহাড়ের দক্ষিণে এই ধরণের কিছু উঁচু বেদী বানিয়েছিলেন, যেখানে সীদোনীয়দের ঘৃণ্য মূর্ত্তি অষ্টোরতের পূজার জন্য এই সব বেদী ব্যবহার করা হত| এছাড়াও মহারাজ শলোমন মোয়াবীয়দের কমোশ ও আমোনীযদের মিল্কম প্রমুখ ঘৃণ্য মূর্ত্তির জন্য য়ে সমস্ত উঁচু বেদী বানিয়েছিলেন, য়োশিয সে সমস্তই ভেঙে দিয়েছিলেন|
য়োশিয পর্বতের আশেপাশে তাকিযে অনেক কবরখানা দেখতে পেলেন| লোক পাঠিয়ে সেখান থেকে মৃত মানুষের হাড় তুলিযে এনে, য়োশিয সেই সমস্ত হাড় য়জ্ঞবেদীতে পুড়িয়ে, য়জ্ঞবেদী অশুচি করে দেন| ভাব্বাদীদের মুখ দিয়ে প্রভু, যারবিয়াম যখন সেই বেদীর পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন, তখনই এই সব ভবিষ্যত্বাণী করিযেছিলেন|য়োশিয চারপাশে তাকিযে সেই ভাব্বাদীদের সমাধিস্থল দেখতে পেলেন|
য়োশিয প্রশ্ন করলেন, “ওটা কিসের ফলক?” শহরের লোকরা তাঁকে উত্তর দিলো, “এটা সেই যিহূদা থেকে আসা ভাব্বাদীর কবর| আপনি বৈথেলের বেদীতে যা করলেন তা তিনি বহু দিন আগেই ভবিষ্যত্বাণী করেছিলেন|”
য়োশিয তখন বললেন, “দেখো ওঁর কবরে য়েন কোন রকম হাত না পড়ে| ওঁকে শান্তিতে থাকতে দাও|” তখন লোকরা শমরিয়ার সেই ভাব্বাদীর সমাধিস্থল য়ে ভাবে ছিল, সে ভাবেই অবিকৃত অবস্থায় রেখে দিল|
শমরিয়ায শহরগুলোয মূর্ত্তিসমূহের বেদীর আশেপাশে য়ে সমস্ত মন্দির গজিযে উঠেছিল য়োশিয সেগুলোও ভেঙে দিয়েছিলেন| ইস্রায়েলের আগেকার রাজা-রাজারা এই সমস্ত মন্দির বানিয়ে প্রভুকে খুবই অসন্তুষ্ট করে তুলেছিলেন| য়োশিয এই সব মন্দিরের দশা বৈথেলের বেদীর মতোই করেছিলেন|
য়োশিয শমরিয়ার উচ্চস্থানের সমস্ত যাজকদেরই হত্যা করলেন| তিনি বেদীর ওপরে মানুষের অস্থি পোড়ালেন| এই ভাবে তিনি পূজার জায়গা পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করে জেরুশালেমে ফিরে গেলেন|
ইস্রায়েলে বিচারকদের শাসনকালের পর আর কেউ এভাবে নিস্তারপর্ব উদযাপন করেনি| ইস্রায়েল বা যিহূদার আর কোন রাজাই আগে কখনও এত সমারোহের সঙ্গে নিস্তারপর্ব পালন করেন নি|
এর আগের আর কোন রাজাই য়োশিযর মত ছিলেন না| য়োশিয কাযমনোবাক্যে, সমস্ত হৃদয় ও শক্তি দিয়ে প্রভু ও মোশির বিধি অনুসরণ করে জীবনযাপন করেছিলেন| এখনো পর্য়ন্ত কোন রাজাই তাঁর মত শাসন করেন নি|
প্রভু বলেছিলেন, “আমি ইস্রায়েলের লোকদের তাদের বাসভূমি ছাড়তে বাধ্য করেছিলাম| যিহূদার সঙ্গেও আমি তাই করব| যিহূদাকে আমার দুচোখের সামনে থেকে সরিয়ে দেব| এমনকি জেরুশালেমকেও আমি আর দেখতে চাই না| হ্যাঁ, যদিও আমি নিজেই ঐ শহর বেছে নিয়ে বলেছিলাম, ‘য়ে ওখানে আমার নাম থাকবে|’ কিন্তু আমি ঐ মন্দিরটিকেও ধ্বংস করে ফেলব|”
য়োশিযর রাজত্বকালে মিশরের ফরৌণ-নখো ফরাত্ নদীর তীরে অশূর-রাজের সঙ্গে যুদ্ধ করতে যান| য়োশিয মগিদ্দোতে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গেলে, দেখা হওয়া মাত্র ফরৌণ-নখো তাঁকে হত্যা করেন|
য়োশিযর পদস্থ আধিকারিকরা রথে করে তাঁর মৃতদেহ মগিদ্দো থেকে জেরুশালেমে নিয়ে এসে তাঁকে তাঁর পরিবারের সমাধিস্থলে সমাধি দিলেন|এরপর লোকরা য়োশিযর পুত্র যিহোয়াহসকে নতুন রাজা হিসেবে অভিষেক করলেন|
ফরৌণ-নখো, যিহোয়াহসকে হমাত্ দেশের রিব্লাতে জেলে আটক করেন, ফলত যিহোয়াহসের পক্ষে আর জেরুশালেমে রাজত্ব করা সম্ভব হয় নি| তাঁকে, ফরৌণ-নখো 7500 পাউণ্ড রূপো এবং 75 পাউণ্ড সোনা দিতে বাধ্য করেছিলেন|
যিহোয়াকীম ফরৌণকে সোনা ও রূপো দিলেন| কিন্তু তিনি সাধারণ লোককে ফরৌণ-নখোকে দেওয়ার জন্য দেশে কর ধার্য়্য় করলেন তাই প্রত্যেক ব্যক্তি তাদের সোনা ও রূপোর অংশ ফরৌণ-নখোকে দেওয়ার জন্য রাজা যিহোয়াকীমকে দিত|