পরে শমূয়েলের মৃত্যু হইল, এবং সমস্ত ইস্রায়েল একত্র হইয়া তাঁহার জন্য শোক করিল, আর রামায় তাঁহার বাটীতে তাঁহার কবর দিল। পরে দায়ূদ উঠিয়া পারণ প্রান্তরে গমন করিলেন।
তৎকালে মায়োনে এক ব্যক্তি ছিল, কর্ম্মিলে তাহার বিষয়-আশয় ছিল; সে অতি বড় মানুষ; তাহার তিন সহস্র মেষ ও এক সহস্র ছাগী ছিল। সেই ব্যক্তি কর্ম্মিলে আপন মেষদিগের লোম ছেদন করিতেছিল।
সম্প্রতি আমি শুনিলাম, আপনার কাছে লোমচ্ছেদকগণ আছে; ইতিমধ্যে আপনার মেষপালকগণ আমাদের সহিত ছিল, আমরা তাহাদের অপকার করি নাই; এবং যাবৎ তাহারা কর্ম্মিলে ছিল, তাবৎ তাহাদের কিছুই হারায়ও নাই।
ইতিমধ্যে যুবকদের এক জন নাবলের স্ত্রী অবীগলকে সংবাদ দিয়া কহিল, দেখুন, দায়ূদ আমাদের কর্ত্তাকে মঙ্গলবাদ করিতে প্রান্তর হইতে দূতগণকে পাঠাইয়াছিলেন, আর তিনি তাহাদিগকে লাঞ্ছনা করিলেন।
অতএব এখন আপনার কি কর্ত্তব্য, তাহা বিবেচনা করিয়া বুঝুন, কেননা আমাদের কর্ত্তার ও তাঁহার সমস্ত কুলের বিরুদ্ধে অমঙ্গল স্থির হইয়াছে; কিন্তু তিনি এমন পাষণ্ড যে, তাঁহাকে কোন কথা কহিতে পারা যায় না।
তখন অবীগল শীঘ্র দুই শত রুটী, দুই কুপা দ্রাক্ষারস, পাঁচটা প্রস্তুত মেষ, পাঁচ কাঠা ভাজা শস্য, এক শত গুচ্ছ শুষ্ক দ্রাক্ষাফল ও দুই শত ডুমুর-চাক লইয়া গর্দ্দভের উপরে চাপাইল।
দায়ূদ বলিয়াছিলেন, প্রান্তরস্থিত উহার সমস্ত বস্তু আমি বৃথাই রক্ষা করিয়াছি, উহার সমস্ত দ্রব্যের কিছুই হারায় নাই; আর সে উপকারের পরিবর্ত্তে আমার অপকার করিয়াছে।
আর তাঁহার চরণে পড়িয়া কহিলেন, হে আমার প্রভু, আমার উপরে, আমারই উপরে এই অপরাধ বর্ত্তুক। বিনয় করি, আপনার দাসীকে আপনার কর্ণগোচরে কথা কহিবার অনুমতি দিউন; আর আপনি আপনার দাসীর কথা শ্রবণ করুন।
বিনয় করি, আমার প্রভু সেই পাষণ্ডকে অর্থাৎ নাবলকে গণনার মধ্যে ধরিবেন না; তাহার যেমন নাম, সেও তেমনি। তাহার নাম নাবল [মূর্খ], তাহার অন্তরে মূর্খতা। কিন্তু আপনার এই দাসী আমি আমার প্রভুর প্রেরিত যুবকদিগকে দেখি নাই।
অতএব হে আমার প্রভু, জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য, ও আপনার জীবিত প্রাণের দিব্য, সদাপ্রভুই আপনাকে রক্তপাতে লিপ্ত হইতে ও আপন হস্তে প্রতিশোধ লইতে বারণ করিয়াছেন, কিন্তু আপনার শত্রুগণ ও যাহারা আমার প্রভুর অনিষ্ট চেষ্টা করে, তাহারা নাবলের তুল্য হউক।
বিনয় করি, আপনার দাসীর অপরাধ ক্ষমা করুন, কেননা সদাপ্রভু নিশ্চয়ই আমার প্রভুর কুল স্থির করিবেন; কারণ সদাপ্রভুরই জন্য আমার প্রভু যুদ্ধ করিতেছেন, যাবজ্জীবন আপনাতে কোন অনিষ্ট দেখা যাইবে না।
মনুষ্য উঠিয়া আপনার তাড়না ও প্রাণনাশের চেষ্টা করিলেও আপনার ঈশ্বর সদাপ্রভুর কাছে আমার প্রভুর প্রাণ জীবন-বোচ্কাতে বদ্ধ থাকিবে, কিন্তু আপনার শত্রুদের প্রাণ তিনি ফিঙ্গার জালে দিয়া নিক্ষেপ করিবেন।
তখন অকারণে রক্তপাত করাতে কিম্বা আপনি প্রতিশোধ লওয়া হেতু আমার প্রভুর শোক বা হৃদয়ে বিঘ্ন জন্মিবে না। আর যখন সদাপ্রভু আমার প্রভুর মঙ্গল করিবেন, তখন আপনার এই দাসীকে স্মরণ করিবেন।
কারণ তোমার হিংসা করিতে যিনি আমাকে বারণ করিয়াছেন, ইস্রায়েলের ঈশ্বর সেই জীবন্ত সদাপ্রভুর দিব্য, আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করিতে যদি তুমি শীঘ্র না আসিতে, তবে নাবলের সম্পর্কীয় পুরুষদের মধ্যে এক জনও প্রভাত পর্য্যন্ত অবশিষ্ট থাকিত না।
পরে দায়ূদ আপনার জন্য আনীত ঐ সকল দ্রব্য তাহার হস্ত হইতে গ্রহণ করিয়া তাহাকে কহিলেন, তুমি কুশলে ঘরে যাও; দেখ, আমি তোমার রবে কর্ণপাত করিয়া তোমাকে গ্রাহ্য করিলাম।
পরে অবীগল নাবলের নিকটে আসিল; আর দেখ, রাজভোজের মত তাহার গৃহে ভোজ হইতেছিল, এবং নাবল প্রফুল্লচিত্ত ছিল, সে অতিশয় মত্ত হইয়াছিল; এই জন্য অবীগল রাত্রি প্রভাতের পূর্ব্বে ঐ বিষয়ের অল্প কি অধিক কিছুই তাহাকে কহিল না।
কিন্তু প্রাতঃকালে নাবলের মত্ততা দূর হইলে তাহার স্ত্রী তাহাকে ঐ সমস্ত বৃত্তান্ত জ্ঞাত করিল; তখন তাহার অন্তর মধ্যে হৃদয় ম্রিয়মাণ হইল, এবং সে প্রস্তরবৎ হইয়া পড়িল।
পরে নাবল মরিয়াছে, এই কথা শুনিয়া দায়ূদ কহিলেন, ধন্য সদাপ্রভু, তিনি নাবলের হস্তে আমার দুর্নাম-বিষয়ক বিবাদ নিষ্পত্তি করিলেন, এবং আপন দাসকে অনিষ্ট কার্য্য হইতে রক্ষা করিলেন; আর নাবলের হিংসা সদাপ্রভু তাহারই মস্তকে বর্ত্তাইলেন। পরে দায়ূদ লোক পাঠাইয়া অবীগলকে বিবাহ করিবার প্রস্তাব তাহাকে জানাইলেন।